ইহার পর বিসর্গের সন্ধির কথা বলিব। অন্য ব্যঞ্জন-সন্ধি অপেক্ষা সংস্কৃত ভাষাতত্ত্বে ঐটির বেশি প্রয়োজন আছে। কিন্তু বিসর্গের সন্ধির কথা বলিবার পূর্ব্বে কয়েকটি ব্যঞ্জনবর্ণের উচ্চারণের কথা বলিব। যে ভাষা 'সংস্কৃত' নামে আখ্যা পাইয়াছে, উহাতেই বিসর্গের একটা স্বতন্ত্র স্বাধীন উচ্চারণ পাওয়া যায় এবং সে উচ্চারণটি একালে অধিক পরিমাণে 'হ' বর্ণটির উচ্চারণের কাছাকাছি। এই স্বতন্ত্রতা থেকে উহা একটা বর্ণ বলিয়া গণিত হইয়াছে; নহিলে য, র, ল, ব প্রভৃতির মত উহারা বর্ণ সংযোগে জাত 'আওয়াজ' মাত্র। পাণিনি ব্যাকরণে ং ও ঃ (অথবা বিসর্জ্জনীয়) বর্ণমালার মধ্যে স্থান পায় নাই, পরে পাইয়াছে। ং এবং চন্দ্রবিন্দু অনুনাসিকের উচ্চারণ ভেদ মাত্র। যেখানে মিশ্র আওয়াজে অনুনাসিকের খর্ব্ব উচ্চারণ, সেইখানেই সন্ধির সূত্রে ং এবং ঁ। সাধারণ নিয়মে বলিতে গেলে স অক্ষরের স্থানবিশেষের উচ্চারণই বিসর্গ। 'র'জাত বিসর্গের কথা পরে বলিব। হয় ত প্রাচীনকালের উচ্চারণ পদ্ধতি আমাদের বাগ্যন্ত্রে অলক্ষে লাগিয়াছে বলিয়া, সাধারণ শ্রেণীর লোক কোথাও কোথাও 'দুঃখ' কথাটিকে 'দুস্খ' উচ্চারণ করিয়া থাকে। বিসর্গের সাধারণ মূর্ত্ত উচ্চারণ 'স'; শ, ষ, স তিনটির মধ্যে একটা সাধারণ আওয়াজ আছে, যাহার জন্য তিনটিই একনামে পরিচিত হইয়াছে সেই সাধারণ আওয়াজটুকু ভাবিয়া লইতে হয়, লিখিয়া বুঝান যায় না। তালু হইতে উচ্চারণ করিলে 'শ' যেরূপ উচ্চারিত হয়, তাহাতে যে ধ্বনিটি তেলেগু তামিলের 'চ' উচ্চারণের কাছাকাছি যায়, তবে 'শ' উচ্চারণটি আর একটু কঠোর রকমের ফিস্-ফিস্ আওয়াজের সহিত যুক্ত। তামিলে 'শ' একটু কোমল করিয়া উচ্চারণ করে বলিয়া 'চ' এবং 'শ'এ কোন প্রভেদ নাই; একই অক্ষর উভয়ের প্রয়োজন নিষ্পন্ন করে। পূর্ব্ববঙ্গের কোন কোন স্থানের চ ও ছও প্রায় তেলেগু তামিলের মত উচ্চারিত। সন্ধির নিয়ম দেখিয়া মনে হয়, পূর্ব্বকালে চ ছ প্রায় দ্রবিড়িধরণে উচ্চারিত হইত, উভয়েরই উচ্চারণ স্থান তালু। ষ টি উত্তর পশ্চিম প্রদেশে খ হইয়া গিয়াছে, আমরাও ক + ষ 'ক্খ' উচ্চারণ করি, আমাদের
Page:The history of the Bengali language (1920).pdf/172
150
APPENDIX II